সুপার কিলারের সঙ্গে শর্ত হয়েছিল, স্ত্রীকে হত্যার জন্য টাকা দিতে পারবে না স্বামী। তবে খুনের আগে মিলবে ধর্ষণের ‘সুযোগ’। ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল থানার এক নারীকে হত্যার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে স্বামীকে। তদন্তকারীদের দাবি, ওড়নার ফাঁস গলায় পেঁচিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেছে স্বামী

আনন্দবাজার পত্রিকাকে বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘অভিযুক্ত এক ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে স্পষ্ট হবে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। স্ত্রীকে মারধর করত স্বামী। এসব সহ্য করতে না পেরে মাঝেমধ্যেই স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যেতেন। দু’জনেরই সন্দেহ ছিল, অন্য জনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, কয়েকদিন আগেও স্বামী তার স্ত্রীকে মারধর করে। এরপর তিনি বাবার বাড়িতে চলে গেলে স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করেন ওই ব্যক্তি।

গ্রেফতারকৃত স্বামী পুলিশকে জানিয়েছে, এক পরিচিত দুষ্কৃতীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। ‘চুক্তি’ হয়, স্ত্রীকে খুন করতে টাকা দিতে পারবে না। তবে স্ত্রীকে ধর্ষণের সুযোগ করে দেবে স্বামী।

হত্যার পরিকল্পনার কথাও পুলিশকে জানায় গ্রেফতার হওয়া স্বামী। পুলিশ জানায়, ওই নারী মাঝে মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে কিছু মালপত্র পাচার করতেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই দুষ্কৃতীর মাধ্যমে তার স্ত্রীকে টোপ দেয়, একটি পুঁটুলি সীমান্ত পার করে দিলে কিছু টাকা দেবে। এতে রাজি হয়ে যায় তার স্ত্রী।

এরপর বুধবার রাত ৮টার দিকে তার স্ত্রী ওই দুষ্কৃতীর সঙ্গে সীমান্তের দিকে যান। এ সময় তার স্বামী এবং আরও কয়েকজন পিছু নেয়। এরপর সীমান্তের কাছে একটি বাঁশবাগানে নারীকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার স্বামী হাজির হয়ে স্ত্রীকে মারধর করে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এলাকা ছাড়ে।

শুধু তাই নয়, হত্যার শিকার হওয়া নারীর স্বামীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির দুই ছেলেমেয়ে। বাড়ি ফিরে ওই ব্যক্তি ছেলেমেয়ের কাছে জানতে চায়, তাদের মা কোথায়। তারা কোনো তথ্য না দিতে পারলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে, কান্নাকাটিও করে।

কিন্তু পুলিশের সন্দেহ তৈরি হয় কয়েকটি কারণে। বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার জানান, খোঁজাখুঁজি করলেও থানায় ডায়েরি করেনি স্বামী। শ্বশুরবাড়িতে ফোন করেও খোঁজ নেয়নি। যেটা অন্যসময় করত।

বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামবাসীরা সীমান্তের কাছে বাঁশবাগানে নারীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরে নারীর ভাই থানায় কার তার স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন।

রাতে নারীর স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠান।

অভিযুক্তের কিশোর ছেলে বলে, ‘মার খোঁজ না পেয়ে বাবাকে বলেছিলাম থানায় যেতে, বাবা যায়নি। মামার বাড়িতে ফোন করেও জানতে চায়নি। মরদেহ উদ্ধারের পরেও থানায় অভিযোগ করতে চায়নি। তখনই বাবার উপরে সন্দেহ হয়। আমি চাই, বাবার কঠোর শাস্তি হোক।’

 

কলমকথা/ বিথী